মইনুল হাসান আবির: আর মাত্র দুই-তিন দিন পরেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় জমে উঠেছে সিলেট নগরীর বিপণি বিতানগুলো। আনন্দকে আরও বাড়িয়ে নিতে প্রিয়জনদের নিয়ে শেষ সময়ে ঈদের কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। রমযানের শেষের দিকে দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কেটগুলোতে চলছে কেনাকাটার উৎসব।
বিদেশী পোশাকে বেড়েছে চাহিদা!
শপিংমলগুলোতে কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী
কেউ ফিড়ছে বাড়ি, কেউ মার্কেটে
শনিবার (২৬ রমজান), সিলেট নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় জিন্দাবাজারের শুকরিয়া মার্কেট, আল-হামরা শপিং মহল, মধুবন সুপার মার্কেট, মেলেনিয়াম, রাজা ম্যানশন, হাসান মার্কেট, সিটি সেন্টার, শ্যামলী মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে এ চিত্র দেখা যায়। জিন্দাবাজারের বিপণি বিতানগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নয়াসড়ক ও কুমারপাড়ায় বেশকয়েকটি নামিদামি ব্র্যান্ডের দোকান থাকায় সেখানে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে ক্রেতাদের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে বিক্রেতাদের। তাই বিক্রেতারাও বেশ খুশি। ছোট-বড় মার্কেট, শোরুম ও শপিংমলগুলোতে পোশাকের সমাহার আর বাইরে রং-বেরংয়ের বাতিতে ঝলমল করছে মার্কেট এলাকা।
সরজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো ঘুরে জানা গেছে, রমজান শুরুর পূর্বেই ক্রেতাদের চাহিদার দিক বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নিত্যনতুন কালেকশন নিয়ে পসরা সাজিয়েছে ফ্যাশন হাউজ, মার্কেট ও অভিজাত বিপণিবিতানগুলো। ঈদের কেনাকাটার জন্য মাহা, আড়ং, মনোরম, ইজি, সিগন্যাল, স্কোয়াড, বারটন, নজরানা, কমলাভান্ডার, রং, আরশী নগর, সিগনেচার, প্লাস পয়েন্ট, টেক্সমার্ট, প্রাচ্য, ইনফিনিটি, আর্টিশটি, রঙের বাড়ই, বাংগালীয়ানা, শী, পাপ্পী, শিশুর হাট, প্রবর্তন, উইম্যান্স ওয়াল্ড, ক্যাটস আই, লাইফ স্টাইল, এক্সাটাসি, ডিমান্ড, জি-স্টার, উৎস, নিপুণসহ বিভিন্ন শপিংমলগুলোতেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এদিকে হাসান মার্কেট ও হকার্স মার্কেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রেতাদের ভিড় লক্ষণীয়। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে শৌখিন ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা করার জন্য ছুটে আসছেন সিলেট শহরে। সে কারণেও নগরীর শপিংমলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দেশের বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরেও বিদেশি পোশাকে বাজার সয়লাব বলে বরাবরের মতো আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিক্রেতাদের কেউ কেউ। বাজার ঘুরেও দেখা গেছে, দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি হাত বাড়ালেই মিলছে ভারতীয়, পাকিস্তানি, চায়নাসহ বিদেশি পণ্য। এতে দেশীয় পণ্যের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান তারা। সিলেট ঈদ বাজারে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আলিয়াকাট ও নায়রাকাট, পিছিয়ে নেই সারারা-ঘারারাও। মিম নামে এক ক্রেতা বলেন, শেষ মুহূর্তে ভিড়ের কারণে এ বছর ঈদের কেনাকাটা একটু আগেই সেরে ফেলার ইচ্ছা থাকলেও এর পরেও এসে দেখি বাজারে উপচেপড়া ভিড়। কাপড়ের দাম চাইছে বেশি। দামাদামির সময় নেই, এর মধ্যেই আমার জন্য থ্রি-পিস কিনলাম। আমার আরো অনেক কেনাকাটা বাকি আছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দোকানে ও শপিং মলে ঘুরে ঘুরে কিনছেন পছন্দের পোশাক। এবারের ঈদে গরমের কথা মাথায় রেখেই বেশিরভাগ ক্রেতাই ঝুকছেন সুতি কাপড়ের দিকে। কেউ রঙকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, আবার কেউবা ফ্যাশনের দিকে নজর রেখেছেন। তবুও রয়েছে বেশি দাম নেয়ার অভিযোগ। শিশু ও নারীদের পোশাক বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। পুরুষের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি, নারীদের ঈদ শপিংয়ে প্রাধান্য পেয়েছে সালোয়ার কামিজ ও শাড়ি, শিশু-কিশোরদের রয়েছে ভিন্নতা।
সবশেষে, সিলেটে বসবাসকারী বিভিন্ন অঞ্চলের চাকুরিজীবীরা ফিরছেন বাড়ি। ঈদের চিরায়ত আকর্ষণ গ্রামেই বেশি। আর এ জন্য নাড়ির টানে ছুটে চলা। হোক না তা শত ঝক্কি-ঝামেলার। স্বজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনে বাস, ট্রেন ও ছোট যানবাহনে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের। ট্রেনে আপাতত নির্বিঘ্ন যাত্রা হলেও চাপ মহাসড়কে, গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। যাওয়ার আগে সবাই সারছেন কেনাকাটা।
ঈদুল ফিতর/সিলেট/আবির
Facebook Comments