রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামগুলোতে বৃহস্পতিবার নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে। সেখানে ইসলামি পবিত্রগ্রন্থের ছিন্ন পাতাসমূহ এলোমেলোভাবে এখানে-সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছেন সংবাদকর্মীরা।
নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা তাদের নিজস্ব ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে বলে মায়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে- এই ঘটনা সরকারের দাবিকে তীব্র সন্দেহের মধ্য ফেলে দিয়েছে।
সরকার নিয়ন্ত্রিত সফরে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের গাউডু জারা গ্রামে নতুন করে আগুন দেয়ার ঘটনা প্রায় দুই ডজন সাংবাদিক প্রত্যক্ষ করেছেন।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৮ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা তাদের অধিকার বিশেষ করে দেশটির নাগরিকত্ব চেয়ে আসছে।
আর সরকার দীর্ঘদিন সেই দাবিকে উপেক্ষা করে আসছে। শুধু উপেক্ষা নয়, রীতিমত রাষ্ট্রীয় মদদে দমনপীড়ন চালানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর, যার সর্বশেষ নজির গত ২৪ আগস্ট।
মায়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার আগেই রাখাইন অবরুদ্ধ করে রাখে। এরই বদলা নিতে রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে ওইদিন প্রবেশের চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা প্রায় ৪০০ জনকে হত্যা করেছে এবং সৈন্যরা ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ পরিচালনা করেছে। কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই তারা দাবি করছে যে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে।
কিন্তু রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, সৈন্যরা ও চরমপন্থী বৌদ্ধ জনতা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদেরকে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়।
রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া গ্রামগুলো পরিদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার প্রায় দুই ডজন সাংবাদিককে অনুমতি দেয়া হয়। গ্রামগুলোতে কোনো রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি দেখতে পায়নি সাংবাদিকরা। তাহলে সেখানে আগুন কারা লাগিয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিগত একজন রাখাইন গ্রামবাসী জানান, পুলিশ ও রাখাইন বৌদ্ধরা মিলে সেখানে আগুন লাগিয়েছে। তাকে অন্য কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই গ্রামবাসীরা তাকে দ্রুত স্থানটি ত্যাগ করে।
সাংবাদিকরা প্রায় এক ডজন বৌদ্ধ চরমপন্থীর হাতে রাম দা দেখতে পায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তারা কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়ে। আগুনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাদের মধ্য একজন জানান, তিনি এই মাত্র এসেছেন এবং কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি জানেন না।
ঘরবাড়ি ছাড়াও সেখানে একটি মাদ্রাসা এবং একটি ইসলামি স্কুল আগুনে জ্বলছিল। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং সেগুলো বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। তবে, কাছাকাছি একটি মসজিদে আগুন দেয়া হয় নি।
‘আহ লিল থান কিউ নামে অন্য আরেকটি গ্রামে সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন। গ্রামটির চারপাশে কেবল পুড়ে যাওয়া কয়লা আর ধ্বংসের চিহৃ। গবাদি পশু ও কুকুরগুলো এখনো ধূমায়িত অবশিষ্টাংশে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা অং কিও মো জানান, গত মাসে শুরু হওয়া সহিংসতায় গ্রামটির ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নিহতেদের মধ্য আমাদের একজন ইমিগ্রেশন অফিসার এবং শত্রু পক্ষের ১৭ রয়েছে।’
গ্রামটির অধিকাংশ ঘরবাড়িই আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানকার একটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
Facebook Comments